বিনোদন ডেস্ক:
বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসাসহ গ্রেপ্তার মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ফের আট দিনের এবং মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের ফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী ও ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গুলশান থানার মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে পিয়াসাকে আদালতে হাজির করে একই মামলায় ফের ১০ দিন, ভাটারা থানার আরেক মামলায় ১০ দিন এবং খিলক্ষেত থানার আরেক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি। অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থানার মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মৌকে আদালতে হাজির করে একই মামলায় ফের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করা হয়। আর আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনের শুনানির মাঝে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন পিয়াসা ও মৌ।
পিয়াসা বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ বলছে জিসানের ডেইরি ফার্মে গরু ব্যবসার নামে মাদক কেনা-বেচার কথা। জিসান গরু ব্যবসা করেন। কিন্তু আমি গরু ব্যবসার সাথে জড়িত না। কোরবানি উপলক্ষে অন্যরা যেমন গরু কিনতে গিয়েছিল, তেমনি আমিও সেখানে গিয়েছিলাম গরু কিনতে। আর মিশুর হলো গাড়ির ব্যবসা। ৭/৮ বছর আগে থেকে তাদের সাথে আমার পরিচয়। আমি শিউর হয়ে বলতে পারব, আমরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আপনারা জানেন, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ আমার সাবেক স্বামী। তাদের সাথে আমার পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়। আমি চক্রান্তের শিকার। চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
পিয়াসা বলেন,‘ আমি একটা ভালো পরিবেশে বড় হয়েছি। ভালো একটা জব করি। আগে আমি এশিয়ান টেলিভিশনেও কাজ করেছি। হঠাৎ কয়েকদিন আগে আমার ও আরেকজনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। তার বাসা থেকে ৭০০ পিসের মতো ইয়াবা, আবার আমার বাসা থেকেও একই পরিমাণের ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়। তারপর আমাদের আটক করা হয়।’ এরপর মৌ বলেন, ‘তিনি মদ বা ইয়াবা কিছুই খান না। এসব ব্যবসার সাথেও জড়িত না।’
গত ১ আগস্ট রাতে পিয়াসার বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। একই দিনে মৌয়ের মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাদের দুই জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড আবেদনে পিয়াসা ও মৌ উভয় মাদক ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াসা ও মৌ জানান, তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন।বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সীসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করতেন।
প্রথমে পিয়াসার গুলশান থানার মামলায় রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘এ মামলায় ডিবি পুলিশ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তা কমপ্লিট হয়নি। আবার তদন্ত সংস্থা বদলি হয়েছে। তাকে আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’
পিয়াসার পক্ষে তার আইনজীবী জামিল সিদ্দিকী বাপ্পি বলেন, এ মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মাদক তো উদ্ধার হয়ে গেছে। আর তদন্ত সংস্থা বদলি হলে প্রশাসনিক কারণে তিনি কেন হ্যারেজমেন্ট হবে। এরপর ভাটারা থানার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানের সাথে পিয়াসার যোসাজস রয়েছে। তারা একটি চক্র। পিয়াসা মিশুকে টাকা পয়সা দিয়ে মাদক ব্যবসায় অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করে। মাফিয়া ডন পিচ্চি হান্নানের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা আছে। মুখোশের আড়ালে তারা অপরাধ করে আসছে।
সর্বশেষে পিয়াসার বিরুদ্ধে শুনানি হয় খিলক্ষেত থানার মামলায়। সেখানে রিমান্ড শুনানিতে প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, জিসান একটা ডেইরি ফার্মের মালিক। ফার্মের ভেতর গরু ব্যবসায়ীর নামে তারা মাদক কেনা-বেচা করতেন। পিয়াসা জিসানকেও টাকা দিয়ে মাদক ব্যবসায় সহায়তা করে। তিন মামলার শুনানি শেষে আদালত পিয়াসার তিন মামলায় আট দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রবীন কুমার ঘোষ আসামি মৌকে আদালতে হাজির করে ফের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউট আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আসামি তার বাসায় আসর বসাতো।কীভাবে তার পরিবার, হ্যাজবেন্ড এটা অ্যালাউ করতো। পুরো পরিবার এর সাথে জড়িত। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মাদকের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
আসামির পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেন রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে শুনানি করেন। তিনি বলেন, আমরাও মাদকমুক্ত সমাজ চায়। কিন্তু মডেল হিসেবে যে মৌ কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি আসলে কি একজন মডেল। মডেলরা তো নাচ, গান, অভিনয় করেন। কিন্তু তিনি তো কিছুই করেননি। ভদ্র মহিলা, সম্মানিত পরিবারের সদস্য। এভাবে গ্রেপ্তার হওয়ায় শারীরিক, মানসিকভাবে বিপদগ্রস্থ হয়ে গেছেন। তার রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থণা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।